সময়ের যাত্রী এবং ভৌতিক রাত
একসময়, ২২১০ সালের পৃথিবী ছিল প্রযুক্তির চরম শিখরে। মানুষ পৃথিবীর এক কোণ থেকে আরেক কোণে যাতায়াত করত লেজার স্পিডে, কিন্তু সময়ের ভ্রমণ—তা ছিল এক অসম্ভব কল্পনা। তবে, ড. দেবাংশু রায়, একজন অভিজ্ঞানী বিজ্ঞানী, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। বহু বছরের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি তৈরি করলেন একটি সময় ভ্রমণ যন্ত্র—"কাল যাত্রী"।
ড. দেবাংশু তাঁর প্রথম যাত্রার জন্য ১৮৩০ সালকে বেছে নিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেখতে, সেই সময়ে কীভাবে মানুষ জীবনযাপন করত, কী ছিল তাঁদের সংস্কৃতি এবং চিন্তা। কিন্তু তিনি জানতেন না, যে যাত্রা তিনি শুরু করতে যাচ্ছেন, তা হবে এক ভৌতিক যাত্রা।
যখন দেবাংশু ১৮৩০ সালে পৌঁছালেন, তখন ভোরের আলোও কমপ্লিটলি ম্লান ছিল। গ্রামের রাস্তায় কিছু মানুষ হাঁটছিল, কিছু ব্যবসায়ী দোকান সাজাচ্ছিলেন। কিন্তু এক ধরনের অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল। দেবাংশু এগিয়ে চললেন, তবুও কিছু একটা তার অজানা ভয়কে জাগিয়ে তুলছিল।
গ্রামের এক বৃদ্ধ লোক বললেন, "তুমি যে জায়গায় যাচ্ছ, সেখানকার গল্প শোনা না, তুমি বিপদে পড়বে।"
কিন্তু দেবাংশু তার কথা গুরুত্ব দিলেন না, কারণ তিনি তো একজন বৈজ্ঞানিক, বিশ্বাস করেন না অবাস্তব গল্পে। তিনি আরও একটু এগিয়ে গেলেন, তখনই সেই ভয়ানক ঘটনার সূচনা হলো।
যেখানে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানে একটি পুরনো, ভেঙে পড়া বাড়ি ছিল। সেই বাড়ি, যেখানে গ্রামের লোকেরা বলত "রাত্রির বাড়ি"। বলা হতো, সেই বাড়ির মধ্যে রাতের অন্ধকারে কোনো অদৃশ্য শক্তি বাস করত। সেই বাড়ির মধ্যে কেউ কখনো একা প্রবেশ করেনি। তবে দেবাংশু ঠিক করলেন, এই বাড়ির রহস্য উন্মোচন করবেন।
রাতে, বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তিনি অনুভব করলেন এক অদ্ভুত শীতলতা। হঠাৎ, বাতি নিভে গেল। অন্ধকারে, দেবাংশু শুনতে পেলেন, অদৃশ্য কোনও কিছুর আওয়াজ—ভূতের মতো একটা সিঁড়ি বেয়ে আসার শব্দ। পায়ের আওয়াজ যত কাছে আসছিল, তত তার শরীরে শীতল ঘাম জমছিল।
তার চোখের সামনে, একটি মহিলার ভয়ঙ্কর চেহারা ভেসে উঠল। তার শরীর পচে গেছে, মুখ বিকৃত, চোখ একদম সাদা। মহিলা তাকে দেখে বলল, "তুমি এখানে কি চেয়েছো? তোমার সময় এসেছে।"
দেবাংশু অবাক হয়ে বলল, "ক... ক... কে তুমি?"
মহিলার হাসি এক ধরনের অশুভ প্রতিধ্বনি তৈরি করল। "আমি সেই নারী, যাকে ইতিহাস ভুলে গেছে। আমি যাঁর আত্মা এই বাড়ির মধ্যে বন্দী। আমি এখানে আটকা পড়েছি, আর তুমি... তুমি আমার সঙ্গে থাকবেই।"
হঠাৎ, দেবাংশু অনুভব করলেন, সময় যেন থেমে গেছে। তার চারপাশে সব কিছু ঘুরতে লাগল। পৃথিবী আর সময় তার হাতে নেই। মহিলা তাকে গভীর অন্ধকারে টেনে নিয়ে গেল। দেবাংশু চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু তার কণ্ঠ নিঃশব্দ হয়ে গেল। তিনি জানতেন, সে মহিলার হাতে এখন তিনি বন্দী।
এবার, তিনি বুঝতে পারলেন, সময় একটি প্যাঁচ, একটি খাঁচা—এটি মানুষের দৃষ্টির বাইরে চলতে থাকে। আর একবার যিনি তার ভিতরে আটকা পড়েন, তিনি কখনও বের হতে পারবেন না।
অবশেষে, গ্রামের লোকেরা সেই বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার সাহস পায়নি। তারা জানত, সেখানে আর একজন "সময় যাত্রী" আর কখনো ফিরে আসবে না।
এইভাবেই, ড. দেবাংশু রায়ও সময়ের মধ্যেই হারিয়ে গেলেন, আর তার ইতিহাস, তাঁর ভ্রমণ এবং তাঁর ভয়, সব কিছু ভীষণভাবে হারিয়ে গেল পৃথিবীর প্রান্তে।
Comments
Post a Comment